আসুন অন্যের সার্কিট কপি না করে নিজে ডিজাইন করি।(পার্ট ১) (ট্রাঞ্জিস্টর বায়াসিং টেকনিক)

ট্রাঞ্জিস্টর এবং ট্রাঞ্জিস্টর বায়াসিং
ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিটে বহুল ব্যবহৃত একটি সেমি কন্ডাক্টর কম্পোনেন্ট হল ট্রাঞ্জিস্টর।মূলত দুটি কাজে এটা ব্যবহার করা হয়-
১।সিগ্ন্যাল এম্পলিফিকেশন এর জন্য।
২।সুইচিং ডিভাইস হিসাবে।
একটা ট্রাঞ্জিস্টর কে সার্কিটে কাজের উপযোগী করে তুলতে এর বিভিন্ন জাংশান পয়েন্টে উপযুক্ত ডিসি ভোল্টেজ এপ্লাই করা হয়।একেই বলে বায়াসিং।
নোটঃ বেস এমিটার জাংশান সর্বদা ফরোয়ার্ড বায়াসে থাকবে এবং বেস কালেক্টর জাংশান সর্বদা রিভার্স বায়াসে থাকবে।
বায়াসিং কিভাবে করব এবং কী পরিমান ভোল্টেজ কোথায় দিয়ে বায়াসিং করব তা জানতে হলে আগে কয়েকটি বিষয় জানতে হবে।
ফেইথফুল এম্পিফিকেশন কী
আমরা সবসময় চাই যে, ইনপুট সিগ্নাল এর ওয়েভফর্ম যেমন আউটপুট সিগ্ন্যাল এর ওয়েভফর্ম একই হোক শুধু এম্পলিচিউড টা বেশী হোক।এটাই ফেইথ ফুল এম্পলিফিকেশন। যদি বায়াসিং ঠিক ঠাক না করা হয় তা হলে ইনপুট ওয়েভফর্ম এর কিছু অংশ বাদ পড়ে যেতে পারে।যেটা অবশ্যই আমাদের কাম্য নয়।
ফেইথফুল আম্পলিফিকেশন এর জন্য কী কর্তব্য?
যদি বেস –এমিটার জাংশানে কোনো বায়াস ব্যাটারি না থাকে তা হলে ইনপুট সিগ্ন্যাল এর নেগেটিভ পার্টের জন্য এই জাংশান রিভার্স বায়াস হয়ে যায়,ফলে ট্রাঞ্জিস্টর অফ কন্ডিশনে চলে যায়। ফলাফল হিসাবে এই অংশ আউটপুট ওয়েভফর্ম থেকে কাটা পড়ে,যেটা অবশ্যই কাম্য নয়।এজন্য বেস-এমিটারের মাঝে এমন ভাবে বায়াসিং করআ হয় যাতে কোনোভাবেই না সিগ্ন্যাল এর নেগেটিভ পার্ট ওই জাংশান কে রিভার্স বায়াস করতে পারে।
আরো কয়েকটি কন্ডিশন এখানে মেইন্টেন করতে হয়, যেমন-
১।মিনিমাম বেস এমিটার ভোল্টজ
জার্মেনিয়াম ট্রাঞ্জিস্টরের জন্য ০.৫ ভোল্ট
সিলিকন ট্রাঞ্জিস্টরের জন্য ০.৭ ভোল্ট
২।মিনিমাম এমিটার কালেক্টর ভোল্টেজ
জার্মেনিয়াম ট্রাঞ্জিস্টরের জন্য >০.৫ ভোল্ট
সিলিকন ট্রাঞ্জিস্টরের জন্য >১ ভোল্ট
প্রাক্টীক্যালি যদি ০.১ ভোল্টের কম কোনো ভোল্টেজ যদি ডাইরেক্টলি এপ্লাই করা হয় তা হলে,কালেক্টর কারেন্টে তেমন চেঞ্জ হয়না।
প্রতিটি ট্রাঞ্জিস্টর এর একটা কিউ (Q)পয়েন্ট থাকে, এটা স্যাচুরেশন এবং কাট অফ এর মাঝের একটা স্টেবল ডিসি অপারেটিং পয়েন্ট।
স্যাচুরেশন এবং কাট অফ রিজিয়ন এর মাঝের অংশ কে বলে লিনিয়ার রিজিয়ন।এই অঞ্চলের ভিতর কোনো সিগ্ন্যাল এপ্লাই করলে ফেইথফুল এম্পিফিকেশন হয়।


এবার আসি বিভিন্ন ধরনের বায়েসিং টেকনিক নিয়ে।
প্রথমত দুটি পৃথক ব্যাটারি দিয়ে বায়াস, একটা সার্কিটে একাধিক ব্যাটারি ব্যবহার করা ইকোনোমিক্যাল নয় তাই এই মেথড ব্যবহার করা হয়না। তার পরিবর্তে এমন কিছু সার্কিট কনফিগারেশন টেকনিক ব্যবহার করা হয় যেটা একটাই সোর্স থেকে ভিভিন্ন ভাবে ট্রাঞ্জিস্টর কে ডিসি বায়াস প্রদান করে। এমনই কয়েকটা টেকনিক হল-
১।বেস রেজিস্টর মেথড
২।এমিটার বায়াস মেথড
৩।বায়াসিং উইথ কালেক্টর ফিডব্যাক রেজিস্টর
৪।ভোল্টেজ ডিভাইডার বায়াস।
এদের মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হল ভোল্টেজ ডিভাইডার বায়াস।
এবার এদের একে একে আলোচনা করা যাক।
বেস রেজিস্টর বায়াস


সুবিধা বলতে এটা সিম্পল।বায়াসিং সার্কিট সোর্স কে লোড করেনা।
এর পদ্ধতির সমস্যা হল এটা খুব আন স্টেবল কনফিগারেশন।থার্মাল রানওয়ের সম্ভবনা বেশী।তাই এই পদ্ধতি মূলত সুইচিং এর কাজে লাগে।
এমিটার বায়াস মেথড

সুবিধা হল এই সার্কিট কনফিগারেশন ট্রাঞ্জিস্টর এর গেইন এর উপর নির্ভর করে না, কিন্তু সমস্যা হল এখানে দুটো ভোল্টেজ সোর্স লাগে।
কালেক্টর ফিডব্যাক মেথড

সমস্যা হল নেগেটিভ ফিডব্যাক গেইন কমিয়ে দেয়,এবং কালেক্টর রেজিস্টরে ভোল্টেজ ড্রপ বেশী হয়।

ভোল্টেজ ডিভাইডার বায়াস


এখানে ভোল্টেজ ডিভাইডার এর কাজ করেছে R1 এবং R2।
দুটো রেজিস্টর লাগানো আছে মেইন সাপ্লাই এবং গ্রাউন্ডের মাঝে।R2 রেজিস্টর এর মাঝে ভোল্টেজ ড্রপ বেস এমিটার জাংশান কে ফরোয়ার্ড বায়াস প্রদান করে।এর জন্যই কোনো এক্সটারনাল ইনপুট সিগ্ন্যাল ছাড়াই কালেক্টরে একটা কারেন্ট আউটপুট পাওয়া যায়। এটাকে বলে “জিরো সিগ্ন্যাল কালেক্টর কারেন্ট”।
Re রেজিস্টরটি দেওয়া হয়েছে স্টেবিলাইজেশন এর জন্য।এই কনফিগারেশনে কালেক্টর কারেন্ট গেইন এর উপর নির্ভর করেনা। তাই এটা এমন একটি বায়াসিং পদ্ধতি যেটা স্টেবল এবং ট্রাঞ্জিস্টর এর প্যারামিটার চেঞ্জ এর উপর নির্ভর করেনা। তাই এই পদ্ধতি এত জনপ্রীয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কী ভাবে বিভিন্ন রেজিস্টরের মান সিলেক্ট করবেন।
প্রথমেই বলে নিই এখানে আমি বেশী থিওরিটিক্যাল আলোচনায় যাচ্ছিনা।মূলত হবিইস্টদের উপযোগী করে লিখছি।
১।R2 রেজিস্টরের ভ্যলু এবং সোর্স সাপ্লাই ভোল্টেজ এর মান এমন ভাবে রাখুন যাতে করে, R2 রেজিস্টরের ভোল্টেজ ড্রপ ইনপুট সিগ্ন্যালের নেগেটিভ ভোল্টেজের ম্যাগিচিউড এর থেকে বেশী হয়।
মনে করুন আপনি যে সিগ্ন্যাল টি এম্পিফাই করতে চাইছেন, তার নেগেটিভ পার্টের ম্যাক্সিমাম এম্লিচিউড ৫ ভোল্ট।তার মানে R2 রেজিস্ট্যান্স এ ভোল্টেজ ড্রপ অন্তত ৫ ভোল্টের থেকে বেশি করতে হবে।
নোটঃ R1 এর ভ্যালু সাধারনত R2 এর থেকে বেশী হয়।(সাধারনত প্রায় দ্বিগুন রাখা হয়)। Rc এর মান এম্মন রাখা হয় যাতে করে ইনপুট সিগ্ন্যালের সর্বোচ্চ ডেভিয়েশনেও কালেক্টর কারেন্ট ম্যাক্সিমাম কালেক্টর কারেন্ট লিমিটকে ক্রশ না করে।(ম্যাক্সিমাম কালেক্টর কারেন্ট ডেটাশিটে দেওয়া থেকে)। এই রেজিস্ট্যান্স এর মান তুলনার অন্যগুলোর থেকে কমই হয়।
RE রেজিস্টরের মান সাধারনত বেশীই রাখা হয়।  সাধারনত এমন একটি ভোল্টেজ বারাসিং তৈরি করার চেষ্টা করে হয় যাতে করে-
Vcc>VCE>VBE>VE
উদাহরন দিলে ভালো হবে বুঝতে।
ভোল্টেজ সোর্স মনে করুন ১২ ভোল্ট,ইনপুট সিগ্নালের সর্বোচ্চ নেগেটিভ পিক ভোল্টেজ ৩ ভোল্ট। এখন যদি আপনি R1=10k and R2=5k নেন তাহলে ফরোয়ার্ড ভোল্টেজ হবে চার ভোল্ট। এর ফলেই ফেইথফুল এম্পলিফিকেশন সম্বব।


উপরের ছবিটা একটা প্র্যাক্টিক্যাল সিঙ্গেল ট্রঞ্জিস্টর এম্পলিফায়ারের।
এখানে দুটো ক্যাপাসিটর এক্সট্রা যোগ করা হয়েছে।এদের কাজ নিম্নরূপ।
যখন একটি সিগ্ন্যাল সোর্স ইনপুটে কানেক্ট করা হয় তখন ওই সোর্সের রেজিস্ট্যান্স R2 এর সাথে প্যারালাল হয়, হলে বারাসে পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই সিগ্ন্যাল সোর্স কে আইসোলেট করে শুধু এসি সিগ্ন্যাল কে বেসে চালান করার জন্য C1 ক্যাপাসিটর টি ব্যবহার করা হয়েছে।এর মান সাধারনত ১০ থেকে ৫০ মাইক্রোফ্যারাড রাখা হয়।
CE ক্যাপাসিটর টি এম্পিফায়েড এসি সিগ্ন্যালের জন্য  লো রেজিস্ট্যান্স বাইপাস এর জন্য ব্যবহার করা হয়। যদি তা না করা হত তাহলে পুরো কারেন্ট RE রেজিস্ট্যান্স এর ভিতর দিয়ে যেত।ফলে অনেকটা ভোল্টেজ ড্রপ করে যেত ফলাফল হিসাবে আউটপুট ভোল্টেজ কমে যেত।এর ভ্যালু সাধারনত কয়েকশো মাইক্রোফ্যারাড হয়।
আর একটা ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয় কালেক্টর এর সাথে যেটা এখানে দেখানো হয় নি, এটা ব্যবহার করা হয় অন্য কোনো ট্রাঞ্জিস্টর এর সাথে কাপ্লিং এর জন্য।
চলবে...............।।
লেখা -অভিজিৎ মাইতি।( B-tech, Electrical Engineering)


Comments