একটা প্রযক্তি যা বিপ্লব এনেছে ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিতে

মোবাইল টা হাতে নিয়ে একটু ঘুরিয়ে ধরতেই সাথে সাথে উলটে গেল ডিসপ্লে টা অথবা গাড়িটা এক্সিডেন্ট করার মূহুর্তেই আপনাকে বাঁচাতে ফুলে উঠল এয়ার ব্যগটা।
একটা প্রযক্তি যা বিপ্লব এনেছে ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিতে। এটার পুরো নাম মেমস (MEMS) Micro-Electro-Mechanical-Systems.
হাজার হাজার ট্রঞ্জিস্টর , ক্যাপাসিটর,ডায়োড একটা সিলিকন চিপের ভিতর অনায়াসেই পুরে ফেলা যায়। একে আমরা বলি আই সি। কিন্তু চলমান কোনো গিয়ার ,ক্যান্টীলিভার বা দুলন্ত কোনো পেন্ডুলাম কে কি চিপের মধ্যে ভরা যাবে? ইঞ্জিনিয়ার রা এই আপাত অসম্ভব কে সম্ভব করার চেষ্ঠা করছিলেন। তারই ফল এই মেমস প্রযুক্তি।
সত্যি বলতে এর সূত্রপাত অনেক আগেই হয়েছিল। সায়েন্টিস্ট R. Howe ১৯৮৯ সালে প্রথম তার প্রোটো টাইপ প্রকাশ করেন। কিন্তু উন্নত ম্যনুফ্যাকচারিং টেকনোলজির অভাবে তেমন বানিজ্যিক সাফল্য পায়নি।
প্রথম দিকে মেকানিক্যাল পার্ট এবং ইলেকট্রনিক সিগ্ন্যাল কন্ডিশনার পার্ট দুটি আলাদা চিপে করা হত। কিন্তু এতে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমত যায়গা বেশী লাগে এবং সাথে সাথে একুরেসি এবং রিলায়াবিলিটি কমে যায়। পরবর্তীকালে প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে পুরোটা একটা চিপে করা সম্ভব হয়। যেটা এখন আমরা প্রতিদিন নিজেদের অজান্তেই ব্যবহার করছি।
এমন চিপ প্রোডাকশন করার জন্য চাই অতি উন্নত প্রযুক্তি এবং সর্বাধুনিক মেটেরিয়াল সায়েন্স। আমাদের দেশে প্রোডাকশন কল্পনা মাত্র। কিন্তু যদি নিজেদের প্রয়োজনের জিনিস গুলো নিজের দেশে ম্যানুফ্যকচার হত, আজ এত শিক্ষিত বেকার থাকত না।
বোরিং কথাবার্তা অনেক হল এবার এর কিছু ইন্টারেস্টিং ব্যবহারের কথা বলি।
আপনার ফোনের এক্সিলারোমিটার আসলে একটি মেমস চিপ। এটি এক্সিলারেসন বা ত্বরন এবং এর দিক পরিমাপ করতে পারে। ফোন কে ঘোরালে এটি একটি ইলেকট্রিক্যাল সিগ্ন্যাল ফোনের প্রসেসরে পাঠায়। প্রসেসর একটি সফটওয়ারের সাহায্যে সেই তথ্য হিসেব করে ফোনের ডিসপ্লের ওরিয়েন্টেশন চেঞ্জ করে।
গাড়ী যখন এক্সিডেন্ট করে তা ত্বরন হঠাৎ করে অনেক বেশী নেগেটিভ হয়ে যায়। একটা সেট করা থ্রেসোল্ড লিমিট পার করলেই একটা মাইক্রোকন্ট্রোলার এয়ার ব্যাগ সিস্টেমে সিগ্ন্যাল পাঠায় ভালব গুলো খুলে দেওয়ার জন্য। পুরো ঘটনাটা ঘটে যায় অবিশাষ্য রকম কম সময়ের মধ্যে কয়েক মিলি সেকেন্ড মাত্র।
এরোপ্লেন এবং জাহাজ এর স্টেবিলিটি মেজার করার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহার হয়।
এছাড়া মেমস প্রযুক্তি ব্যবহার হয় জাইরোস্কোপে,মর্ডান ব্লাড প্রেসার সেন্সিং, ডি এন এ চিপস এ, ইঙ্কজেট প্রিন্টারের নজেলে।

কি ভাবছেন, ফোনটা হাত থেকে পড়ে বারোটা বেজে গেছে, চুপচাপ সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যাবেন আর বলবেন এমনি এমনি খারাপ হয়ে গেছে?
আর পারবেন না , আধুনিক স্মার্টফোন গুলিতে থাকছে ফ্রি ফল ডিটেকশন ফিচার। ফোনের ত্বরন অভিকর্ষ ত্বরনের সমান হয় যখন হাত থকে মাটিতে পড়ে এবং প্রতিবার ফোন এটা রেকর্ড করে রাখে। তাই যে কেই সহজেই বুঝতে পারবে ফোনটা কতবার পড়েছে।
মন খারাপ করবেন না, এর একটা ভালো দিকও আছে। যারা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন এটা শুধু তাদের জন্য। কাজ করতে করতে ল্যাপটপ যদি টেবিল বা হাত থেকে পড়ে যায় তখন সেন্সর ফ্রিফল ডিটেক্ট করে সাথে সাথে হার্ডডিস্ক কে অফ করে দেয় ফলে হার্ডডিস্ক পার্মানেন্ট ড্যামেজ হওয়া থেকে বাঁচে।
আজ এ পর্যন্তই। আপনাদের আগ্রহ থাকলে এক্সিলারোমিটার চিপ কিভাকে কাজ করে লিখব পরের পোষ্টে।
অফ টপিকঃ ( প্রযুক্তি ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব না, সে কৃষিতে হোক বা শিল্পে। অধিকাংশ সময় বাঙ্গালিকে আমার প্রযুক্তি বিমুখ মনে হয়। আজকের ছাত্র সমাজ কালকের দেশ গড়ার কারিগর হবে। তারা আজ মার্কস আর সরকারি চাকরির যাঁতাকলে বিভ্রান্ত। প্রযুক্তির প্রতি তাদের কিছুটা আগ্রহ জাগাতেই আমার এই সামান্য প্রচেষ্ঠা। আপনি যদি শিক্ষিত হন তা হলে আপনার ভাই বোনেদের সাথে লেখাগুলি শেয়ার করে আমাকে সাহায্য করতে পারেন) আরো জনতে আমাদের অফিসিয়াল সাইটে যান jyotshna.com
Er. A Maity

Comments